ভাষা:
ভাষা হল মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। সাধারণত কণ্ঠধ্বনি এবং অঙ্গপ্রতঙ্গের সাহায্যে ভাষা প্রকাশ করা হয়। কণ্ঠধ্বনি বলতে মুখগহবর, কন্ঠ, নাক ইত্যাদি বোঝায় এবং অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ বলতে হাত, পা, চোখ ইত্যাদি বোঝায়। গলনালি, মুখবিবর, কন্ঠ, জিব্বা, তালু, দাঁত, নাক ইত্যাদিকে একত্রে বাগযন্ত্র বা বাকপ্রত্যঙ্গ বলে। কণ্ঠধ্বনি সৃষ্টি করে, আর এই ধ্বনিই ভাষার মূল উপাদান। অর্থাৎ বাকযন্ত্রের দ্বারা সৃষ্ট অর্থবোধক (বোধগম্য) ধ্বনি সংকেতর সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হল ভাষা।
পৃথিবীতে প্রচলিত ভাষার সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি। ভাষাভাষী জনসংখ্যার হিসেবে পৃথিবীর চতুর্থ ভাষা হল বাংলা এবং এটি প্রায় ৩০ কোটি লোকের মুখের ভাষা। বাংলাদেশের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বাংলা এবং ভারতের কয়েকটি অঞ্চলের (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরা, আসাম, উড়িষ্যা ইত্যাদি) ভাষা হল বাংলা।
বাংলা ভাষারীতিঃ
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলভেদে মানুষের ভাষার পার্থক্য দেখা যায়। এদেরকে উপভাষা বলে। সব ভাষারই উপভাষা রয়েছে। ভাষার সাধারণত দুটি রূপ দেখা যায; মৌখিক বা কথ্য এবং লৈখিক লেখ্য। মৌখিক রূপের আবার রয়েছে–চলিত রীতি ও আঞ্চলিক কথ্যরীতি। লৈখিক রূপের রয়েছে–সাধুরীতি ও চলিত রীতি।
১. সাধু (সর্বজনস্বীকৃত লেখ্য রূপ)
|
||
ক. লৈখিক
|
||
বাংলা ভাষা
|
২ও১. চলিত (সর্বজনস্বীকৃত লেখ্য ও মৌখিক রূপ)
|
|
খ. মৌখিক
|
||
২.আঞ্চলিক (উপভাষা)
|
||
চিত্রঃ বাংলা ভাষারীতি
|
সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্যঃ
সাধুরীতি
১। পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট। ব্যাকরণ এর নিয়ম অনুসরণ করে।
২। গুরুগম্ভীর ও তৎসম শব্দবহুল।
৩। নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার অনুপযোগী।
৪। সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে।
চলিত রীতি
১। চলিত রীতি পরিবর্তনশীল।
২। তদ্ভব শব্দবহুল।
৩। সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য এবং আলাপ, বক্তৃতা ও নাটকের সংলাপে উপযোগী।
৪। সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ পরিবর্তিত হয়ে সহজতর রূপলাভ করে। বহু বিশেষ্য ও বিশেষণের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে।
উদাহরণ
সাধু-চলিত (পদ)
|
|
জুতা–জুতো (বিশেষ্য); বন্য–বুনো (বিশেষণ); করিবার–করার/করবার (ক্রিয়া); হইলেন–হলেন (ক্রিয়া); দেখিয়া–দেখে (ক্রিয়া);
|
দেন নাই–দেননি (ক্রিয়া); পার হইয়া–পেরিয়ে (ক্রিয়া); করিয়া–করে (ক্রিয়া); পূর্বেই–আগেই (অব্যয়); সহিত–সাথে/সঙ্গে (অব্যয়)।
|
শব্দ ভান্ডারঃ
বাংলায় বিভিন্ন শাসনামলে বিভিন্ন ভাষার সংস্পর্শে কিছু কিছু শব্দ বাংলা ভাষায় স্থায়ী রূপ নিয়ে বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে। বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার কে পণ্ডিতগণ ৫টি ভাগে ভাগ করেছে-
১। তৎসম শব্দ ২। তদ্ভব শব্দ ৩। অর্ধ-তৎসম শব্দ ৪। দেশি শব্দ ও ৫। বিদেশি শব্দ